বিদেশ ডেস্ক ॥ ভারতের সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনে নিহাংরা যোগ দিয়েছে। তারা রক্ষা করছে কৃষকদের জমি, জাতি, ঘর। আল সানী নিহাংদের সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন- পাঞ্জাবের লাহোর শহর। গুরু নানক থাকেন তাঁর মা-বাবার সঙ্গে। প্রতিদিন যান বাইন নদীতে গোসল করতে। একদিন গেলেন তাঁর মুসলমান বন্ধু মারকানার সঙ্গে। ডুব দিয়ে আর ওঠেন না। খোঁজাখুঁজি শুরু হলো চারদিকে। একেবারে বুঝি হারিয়েই গেলেন! হঠাৎই তিন দিন পর নানক মহল্লায় এসে উপস্থিত হলেন। বলতে থাকলেন, ‘ঈশ্বর আমাকে দেখা দিয়েছেন। আমি তাঁর প্রেরিত পুরুষ। আমি একজন গুরু।’ ঘটনাটি প্রায় ৫০০ বছর আগের। নানক দিনে দিনে শিখ সম্প্রদায় গড়ে তুলতে থাকলেন। শিখ শব্দের মানে হলো শিষ্য। এখন এ সম্প্রদায়ের সদস্য সংখ্যা তিন কোটি। মোগলদের কাল-শিখ গুরু অর্জন দেব ও তেগ বাহাদুর মোগলদের হাতে মারা পড়লেন। তখন দশম শিখ গুরু গোবিন্দ সিং নিহাংদের গড়ে তোলার কথা ভাবেন। দলটির আরেক নাম ‘আকাল পুরখ দ্যে ফৌজ বা ঈশ্বরের সেনাদল’। গুরু দিলেন পাঁচ কানুন। এগুলো হলো—চুল না কেটে লম্বা করা, কাঙ্গা বা চিরুনি ব্যবহার করা, আত্মশক্তি ও আত্মসংযমের জন্য কড়া বা লোহার চুড়ি ব্যবহার করা, আত্মরক্ষার জন্য কৃপাণ বা ছুরি রাখা এবং হাঁটু পর্যন্ত লম্বা অন্তর্বাস ও মাথায় পাগড়ি পরিধান করা। এর সঙ্গে বিশেষ করে নিহাং সেনাদের জোব্বার রং হয় নীল, পাগড়িও একই রঙের। হাতে তারা তরবারিও রাখে। গোবিন্দ সিংয়ের ছেলে ফতেহ সিং প্রচলন করেছিলেন ওই নীল পোশাক। নিহাং শিখরা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল—এক দল নীলওয়ালা, অন্য দল যেকোনো পোশাকের। নিহাংদের বিধি-নিষেধই খালসা বিধি। নিহাং শব্দটা ফারসি। অর্থ হলো কুমির। তবে অনেকে বলেন সংস্কৃত নিঃশঙ্ক থেকে এসেছে নিহাং। অর্থ ভয়হীন। একই সঙ্গে এরা নিষ্কলঙ্ক এবং পার্থিব লাভালাভ সম্পর্কে উদাসীন। নিহংরা বেশ আমুদে। শারদাই বা শরবতি খেতে এরা খুব ভালোবাসে। এটি এক ধরনের পানীয়। ওই সময়ে এতে চিনাবাদাম, এলাচি, পোস্তদানা, মরিচগুঁড়া, গোলাপের পাপড়ি, তরমুজের বীজ এবং আরো অনেক কিছু মেশানো হতো। এর সঙ্গে সামান্য সিদ্ধি হলেই হয়ে যায় সুখনিদান। সিদ্ধির পরিমাণ আরেকটু বাড়ালেই হয় শহিদি দেঘ। শিখদের মধ্যে নীল নিহাংরা এখন ক্ষুদ্র একটি সম্প্রদায়। ১০টি গোষ্ঠী রয়েছে এখন এদের। একেক গোষ্ঠীতে আছে একজন করে নেতা। এরা নীল ঐতিহ্য মেনে চলে। আর এদের মধ্যে বুধা দল, তরুণা দল বেশ শক্তিশালী। পুরো বছর এরা নিজেদের আস্তানায় থাকে। বছরে একবার অমৃতসরের বার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। সেখানে ওরা নিজেদের যুদ্ধকৌশল ও ঘোড়সওয়ারির কৌশল দেখায় সবাইকে। নিহাংরা কখনোই নিরস্ত্র ব্যক্তিকে আক্রমণ করে না। নিহাং দলে যোগ দেওয়া বিশেষ কঠিন কিছু না। তবে তারা চুল কাটতে পারবে না। তাদের মেনে চলতে হবে পঞ্চ বাণী। প্রতিদিন রাত ১টায় গোসল করতে হবে। সকালে ও সন্ধ্যায় প্রার্থনা করতে হবে। গোষ্ঠীভুক্তি পর্বে এগুলো মেনে চললেই অমৃত সঞ্চার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাকাপাকিভাবে নিহাং হওয়া যায়। তখন তাকে একটি নতুন নাম দেওয়া হয় এবং গুরু গোবিন্দ সিং খালসা প্রতিষ্ঠার সময়ে যে জোব্বা পরেছিলেন এবং যে অস্ত্র ধারণ করেছিলেন, সেগুলোই তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
Leave a Reply